রূপকথার রাজ্যে

জেমস লিও ফার্গুসনের বাংলো
জেমস লিও ফার্গুসনের বাংলো

পাহাড়ের এক অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। আছে নীরব এক ভাববিলাস। হেমন্তের চমৎকার রৌদ্রকরোজ্জ্বল ছুটির দিন। পাহাড়ের টানে প্রিয় কিছু সহকর্মীর সঙ্গে বাংলাদেশের একেবারে উত্তর-পূর্ব সীমান্তে পাহাড় দেখতে গেলাম। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ে। পাদদেশে অবস্থিত লোভাছড়া চা-বাগান। আমাদের সবুজ সীমান্তের এক অপূর্ব দর্শনীয় এলাকা।
পাহাড়ি রাস্তায় সবুজে মোড়া সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে পৌঁছে গেছি জেমস লিও ফার্গুসনের বাংলোতে। ছবির মতো সাজানো। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের কোলে লোভা নদীর তীরে অনন্য সুন্দর এই বাংলোটি গড়ে তুলেছেন জেমস ফার্গুসনের পরিবার।

ঝুলন্ত সেতু
ঝুলন্ত সেতু

লোভাছড়া চা বাগানের মালিক জেমস ফার্গুসনের পৈতৃক নিবাস সুদূর স্কটল্যান্ডে। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সিলেটের ৫ নম্বর সাব–সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর জন্ম লোভাছড়া চা বাগানে। তাঁর মা জুন ফার্গুসন লোভাছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) ছিলেন। তৎকালীন ভারত পাকিস্তানে তিনিই ছিলেন কোন চা-বাগানের প্রথম নারী ব্যবস্থাপক। পরে তারা লোভাছড়া চা-বাগানের মালিক হন।
হরেক রকম ফুলে ভরা এই আবাস। ফুলের ভারে গাছগুলো যেন অভিবাদনের ভঙ্গিতে নুয়ে পড়ছে। পুরোনো আমলের শণে ছাওয়া অভিজাত বাংলো। চোখের সামনে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের বিস্তীর্ণ রেঞ্জ। কালচে সবুজ পাহাড়ের গায়ে কে যেন বাটার ক্রিম লাগিয়ে দিয়েছে। এত সুন্দর বরফ সাদা মেঘের কারুকাজ।
খোলা ডাইনিংয়ে প্রিন্টেড কভারে সুশোভিত ডাইনিং টেবিল। এলাহি ভোজের আয়োজন। চমৎকার আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা ও মুগ্ধতা সহকারী কমিশনার লুসি কান্ত হাজং ও জেমস ফার্গুসন সাহেবকে।
লোভাছড়ার অন্যতম আকর্ষণীয় সত্যাপনা ঝুলন্ত সেতু। ১৯২৫ সালে ইংরেজরা লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য সেতুটি নির্মাণ করেন। এই ঝুলন্ত সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে লোভাছড়ার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সম্ভবত এটি সিলেটের একমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজ।

দূরে সবুজ পাহাড়ে মেঘেদের বরফ সাদা আস্তরণ। পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা লোভা নদী মনে হয় যেন এলইডি স্ক্রিনে দেখা কোন দৃশ্য! এত জীবন্ত! যেন চোখের সামনে এক রূপকথার রাজ্য।
বাগানের ফ্রেশ চমৎকার সুগন্ধি চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে মনে হচ্ছিল অনাবিল আনন্দে ভরা এই জীবন। রোজকার কেজো জগৎ থেকে বের হয়ে সুন্দর করে কাটানো সময়। একটু জিরিয়ে নেওয়া। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে একটু দম নেওয়া। এ জীবন সৌন্দর্যের। এ প্রকৃতি বিমূর্ত ভাবাবেগের!